আগেই ঠিক করেছিলাম সেদিন ছুটি শেষে সবাই স্কুলের পাশের খোলা জায়গায় এক হব। জায়গাটা আমাদের প্রত্যেকের খুব চেনা। স্কুলের পাশেই। রোজ এখানে এসে ভেলপুরি-ঝালমুড়ি খাওয়া আর আড্ডা দেওয়া যেন প্রতিদিনের রুটিনের অংশ হয়ে গিয়েছিল। এ জায়গাটাকে আমাদের সব কাজের 'রাফখাতা' বলা যেতে পারে। এখান থেকেই হয় সব পরিকল্পনা। কাজ সেটা ভালো হোক আর মন্দ! কথা মতো সবাই চলে আসে। এর পর হৈ-হুল্লোড় করে, ছবি তুলে কাটে কিছুক্ষণ।
এই বছরটায় খুব সুন্দর সময় কেটেছে। দেখতে দেখতে যে শেষ সীমানায় এসে পৌঁছেছি কেউ টের পাইনি। আসলে কখনও সেপ্টেম্বরেই ক্লাস শেষ হয়ে যায় না তো তাই হয়তো।
দেরি করে আসলে অফিস রুমে গিয়ে ক্লাস করার অনুমতি নেওয়া, তাড়াতাড়ি আসলে চক-ডাস্টার সব ঠিক করে রাখা- এমন ছোট ছোট প্রত্যেকটা বিষয় মনে পড়বে খুব।
শ্রেণি শিক্ষক গণিত করাতেন। স্যার আমার ওপর বিশ্বাস রেখে ক্লাস ক্যাপ্টেন বানিয়েছিলেন। পুরো বছর আমিই ক্যাপ্টেন ছিলাম। প্রতিদিন এসে সবার বাড়ির কাজের খাতা গণনা করতাম। কারা কারা দেয়নি তা বের করে স্যারকে দিতাম। সেটা ছিল ভিন্ন ধরণের মজা। কে বাড়ির কাজ দেয়নি তা বের করার জন্য সবাই যেন গোয়েন্দা হয়ে উঠত।
ক্লাসে হয়তো স্যার কোনো জ্যামিতির মাপঝোক বোঝাচ্ছেন। আর আমরা ব্যস্ত গল্পে। স্যার টের পেয়ে গেলে হাতের চকটা ছুড়ে মারতেন। সেটাও মনে পড়বে।
মাঝে মধ্যে শনিবার আমরা বন্ধুরা এক হতাম জোড়পুকুর মাঠে। সেখানে কখনও চলত ক্রিকেট, কখনও ফুটবল। আহা দিনগুলি!
সময় বয়ে চলে। চাইলেও থামান যায় না। পূর্ব দিকে ওঠা সূর্যটা ধীরে ধীরে ঢলে পড়বে পশ্চিমে। পুরনো হতে থাকবে ক্যালেন্ডারগুলো। দিন চলে যাবে। আবারও স্কুলে আসব। কিন্তু এই ক্লাসে আর বসা হবে না। এটি দখল করবে নতুনরা। নবম শ্রেণিতে উঠে অনেকেই চলে যাবে শুনেছি। যারা থাকবে তাদের কেউ বিজ্ঞান কেউ ব্যবসায় শিক্ষায় ভাগ হয়ে যাবে।
একদিন স্কুল জীবন শেষ হবে, কলেজ জীবন শেষ হবে। এক এক করে পুরো শিক্ষা জীবন শেষ হবে। ধাপে ধাপে মিলবে নতুন সতীর্থ, সহপাঠী। তখন আবার গল্প হবে অন্য কারো সাথে। তবু হয়তো হঠাৎ হঠাৎ মনে পড়বে এ দিনগুলোর কথা। পুরনো বন্ধুদের সাথে আড্ডাটা জমবে না আগের মতো। পুরনো বন্ধুগুলো একদিন যে যার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।
তোরা, ভালো থাকিস। কোনোদিন অবসরে মাঝেমধ্যে একে অন্যের কথা মনে করিস।