একজন শীর্ষেন্দু ও আমার কথা

খবর পড়ছিলাম। হঠাৎ একটি শিরোনামে চোখ আটকে গেল। মনে হচ্ছিল আন্তর্জাতিক খবর। দেশে এমন ঘটবে কল্পনারও বাইরে।

পটুয়াখালীর এক শিশু প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি লিখেছে। প্রধানমন্ত্রী সেটার উত্তরও দিয়েছেন।

কম বেশি আমরা সবাই এই খবরটি দেখেছি। পায়রা নদীতে সেতু নির্মাণের অনুরোধ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি লিখে পটুয়াখালীর সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র শীর্ষেন্দু। প্রধানমন্ত্রী ফিরতি চিঠিতে সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন।

অবিশ্বাস করারই কথা, আন্তর্জাতিক সংবাদ মনে হওয়ারই কথা। উন্নত দেশগুলোর সরকার অথবা রাষ্ট্রপ্রধানের সাইকেলে করে অফিসে যাওয়া, ফিলিং স্টেশনে নিজ হাতে ফুয়েল নেওয়া, ট্রেনে দাঁড়িয়ে যাওয়াসহ অনেক সংবাদ দেখেছি।

খবরটি ধীরে ধীরে ফলাও করে প্রচার করে সংবাদ মাধ্যমগুলো।

একটি শিশুকে দেশের প্রধানমন্ত্রী এত মূল্যায়ন করেছেন যা দেশের সব শিশুর জন্য শুভ সংবাদ।

শীর্ষেন্দু তার ঐ চিঠিতে তিনি লিখেছে, "আমার গ্রামের বাড়ি ঝালকাঠি। আমাদের মির্জাগঞ্জে নদী পাড়ি দিয়ে যেতে হয়। এটি পটুয়াখালী জেলার একটি উপজেলা। এ নদীতে প্রচণ্ড ঢেউ। মানুষ ভয় পায়। কখনও নৌকা ডুবে যায়, কখনও ট্রলার ডুবে যায়। এতে আমার থেকে ছোট ভাই বোন তাদের মা বাবাকে হারায়। আমি আমার মা বাবাকে প্রচণ্ড ভালবাসি। তাদের হারাতে চাই না।

"তাই আপনার কাছে একটাই অনুরোধ যে আপনি মির্জাগঞ্জ নদীতে ব্রিজের ব্যবস্থা করুন। তা যদি আপনি পারেন তা হলে আমাদের জন্য একটু কষ্ট করে এই ব্রিজ তৈরির ব্যবস্থা করুন।"

ফিরতি চিঠিতে প্রধানমন্ত্রী লেখেন,

"স্নেহের শীর্ষেন্দু

তুমি শুধু দেশের একজন সাধারণ নাগরিক নও, দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এবং দেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নেওয়ার অগ্রজ সৈনিক। আমি জানি পটুয়াখালী জেলার মির্জাগঞ্জ উপজেলার পায়রা নদীটি অত্যন্ত খরস্রোতা।

নিজের পিতামাতাসহ অন্যান্য পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এই নদীকেন্দ্রিক তোমার নিরাপত্তা সচেতনতা আমাকে মুগ্ধ করেছে। আমি বুঝতে পারি তোমার বীর মুক্তিযোদ্ধা দাদুর প্রভাব রয়েছে তোমার ওপর। মির্জাগঞ্জের পায়রা নদীতে একটি সেতু নির্মাণ করা হবে বলে তোমাকে আশ্বস্ত করছি।”

শেষের দুই লাইনে শীর্ষেন্দুসহ পরিবারের সবার মঙ্গল কামনা করেন প্রধানমন্ত্রী।

সংবাদটি যতটা পুলকিত করেছে আমাকে তার চেয়েও বেশি নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ুয়া একটি বাচ্চার মতামতকে আমলে নিলেন।

আমাদের সংষ্কৃতিতে শিশুর মতামতকে গুরুত্ব দেওয়ার কথা কেউ ভাবেই না।

তুমি কী বুঝ ? চুপ কর! বলে থামিয়ে দেওয়া হয় ছোটদের। কিন্তু তার কথাতেও যে যুক্তি আছে সেটা বোঝার ক্ষমতা বড়দের নেই। এদেশের প্রধানমন্ত্রী শিশুর মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে দৃষ্টান্ত তৈরি করেছেন। এই ঘটনার পর থেকে মনে হচ্ছে তিনি শিশুদের প্রতি বেশ আন্তরিক।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com