আমরা গিনিপিগ বটে!

আমাদের দেশের শিক্ষা পদ্ধতির রঙ পাল্টায় মুহূর্তে মুহূর্তে। শিক্ষাটা যাদের জন্য  অর্থাৎ শিক্ষার্থীরা সেই রঙ পাল্টানোর দর্শকমাত্র। দফায় দফায় পাল্টানো এসব পদ্ধতির সঙ্গে তারা মানিয়ে নিতে পারছে কিনা তা ভাবছেন না কেউ।

কিছুদিন আগে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার জানিয়েছিলেন, পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা আর হবে না।

এবার থেকেই পঞ্চম শ্রেণিতে আর সমাপনী পরীক্ষা হবে না এ বিষয়ে তিনি নিশ্চয়তা দিয়েছিলেন। পদ্ধতিগত আনুষ্ঠানিকতা বাকি আছে বলে জানিয়েছিলেন।

মন্ত্রীর এমন আশ্বাস আর নিশ্চয়তা দেখে অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন যে পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী আর হচ্ছে না। আমি আর আমার আশেপাশের অনেক মানুষই নিশ্চিত ছিলেন যে পিইসির সমাপ্তি  ঘটছে এখানেই।

তবে বাস্তবে মন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিফলন ঘটেনি। মন্ত্রীসভার বৈঠক শেষে জানানো হয় পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা থাকছে। পরীক্ষা বাতিলের প্রস্তাব আরো পর্যালোচনা করতে হবে।

কিন্তু মন্ত্রী জানিয়েছিলেন তিনি নাকি যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়েই কথা বলেন। যদি প্রস্তাবে কিছুর অভাব থাকে তবে অনুমোদন পেল কিভাবে তা ভাবনার বিষয়।

যাইহোক, এখন প্রশ্ন উঠতেই পারে মন্ত্রী কীভাবে নিশ্চিত হয়ে সে কথা বলেছিলেন? নিশ্চয়তা দেয়ার পরও কেনো শেষ পর্যন্ত পরীক্ষা বাতিল হলো না? তার বক্তব্যের ওপর কি এখন আর শিক্ষার্থীরা আস্থা রাখতে পারবে? আমার মনে হচ্ছে পারবে না।

সত্যি বলতে যারা পিইসি পরীক্ষার্থী তারা হয়তো ধরে নিয়েছে পরীক্ষার ধকল তাদের ওপর দিয়ে যাচ্ছে না। তারা মানসিকভাবে কিছুটা মুক্তি পেয়েছিল হয়তো। কিন্তু যখন শুনল পরীক্ষা হবে তখন তাদের মানসিক অবস্থা পুরোপুরি বদলে গেল। এটা তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর খারাপ প্রভাব ফেলেছে বলে মনে করি।

পঞ্চম শ্রেণিতে পাবলিক পরীক্ষার বিষয়টির সাথে আমি একমত নই। এর কারণ এ সময় ছোট শিক্ষার্থীদের ওপর হঠাৎ অনেক বেশি চাপ পড়ে যায়। এক অজানা ভয় আর আতঙ্ক কাজ করে।

শিক্ষার্থীদের কথা না ভেবেই নেওয়া হচ্ছে বহু সিদ্ধান্ত। ২০১৭ সালের এসএসসি পরীক্ষায় সাতটি সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর লিখতে হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু এ সিদ্ধান্ত অনেক শিক্ষার্থী মেনে নিতে পারেনি। অনেকে রাস্তায় আন্দোলনের জন্য নেমে আসে।

প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে পাবলিক পরীক্ষায় আর বিরতি দেওয়া হবে না বলেও জানিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। পাবলিক পরীক্ষাগুলো হয়ে থাকে সম্পূর্ণ বই নিয়ে। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতির প্রয়োজন রয়েছে। এতগুলো বিষয়ের ওপর টানা পরীক্ষা শিক্ষার্থীদের জন্য ক্লান্তি আর ভয়ের কারণ।

একেক সময় একেক সিদ্ধান্ত আর তা পরীক্ষা করা হচ্ছে শিক্ষার্থীদের ওপর। আবার সিদ্ধান্তগুলো গ্রহণের ক্ষেত্রে আলোচনা করা হচ্ছে না তাদের সাথে। ভাবা হচ্ছে না এই শিশুদের কথা। তারা যেন হয়ে উঠেছে গিনিপিগ। এমন চলতে থাকলে পড়ালেখা শিক্ষার্থীদের জন্য আরো ভয়ের ব্যাপার হয়ে উঠবে।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com