রমনায় ঘোরাঘুরি

ইট কাঠের ঘরে থাকতে থাকতে আমি পুরো হাঁপিয়ে উঠেছি। কদিন ধরেই ভাবছিলাম ঢাকার ভেতরেই সবুজে ঘেরা কোনো জায়গা থেকে ঘুরে আসব।

কোথায় যাব ভাবতেই রমনা পার্কের কথা মাথায় এলো। আমি আগে কখনও রমনায় যাইনি। পরিকল্পনা ঠিক করলেও আজ যাই কাল যাই করে যাওয়া হচ্ছিল না।

গত সপ্তাহের বুধবারের কথা। এক বন্ধুর ফোনে শুনলাম হঠাৎ ঝড়ে রমনার প্রাচীন মহুয়া গাছটি ভেঙে পড়েছে। আমি কখনও মহুয়া গাছ দেখিনি। তাই ভাবলাম যাই ঘুরেই আসি। পরদিন সকালেই বের হলাম রমনার উদ্দেশ্যে।

রমনায় প্রবেশ করলাম কাকরাইলের গেট দিয়ে। পার্কে ঢুকেই মনে হল, অনেক দিন পর আমি শ্বাস নিচ্ছি। বারবার বুক ভরে নিঃশ্বাস নিচ্ছিলাম।

রমনায় অনেক্ষণ হাঁটলাম। নানা ধরনের গাছ দেখলাম। এখানে অনেকেই এসেছেন ঘুরতে। কেউ হাঁটছেন প্রতিদিনের রুটিন অনুযায়ী, কেউ বন্ধুদের নিয়ে প্রাণোচ্ছল আড্ডায় ব্যস্ত। আমি শুধু চারপাশ দেখছিলাম। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর স্নিগ্ধ পরিবেশ উপভোগ করছিলাম।

ঘুরে ঘুরে অনেক গাছ দেখলেও তেমন কোনো গাছই চিনতে পারলাম না। কিছু কিছু গাছের গায়ে নাম লেখা থাকলেও বেশির ভাগ গাছের গায়েই নামফলক লাগানো নেই।

হেঁটে হেঁটে চলে গেলাম রমনার ভেঙে যাওয়া মহুয়া গাছটির তলে। সেখানে মানুষের বেশ জটলাও দেখলাম।

পার্কে ‘এক নজরে রমনা পার্ক’ শিরোনামে একটি সাইনবোর্ডে পার্ক সম্পর্কে বিস্তর লেখা আছে। সেখান থেকেই জানলাম রমনা পার্ক ১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এই পার্কটির আয়তন ৬৮.৫০ একর।

২০০৫ সালের জুলাইয়ে পার্কটির গাছ নিয়ে একটি পরিসংখ্যান করা হয়। এই পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এখানে ২১১টি উদ্ভিদ রয়েছে। এর মধ্যে ফুল ও শোভাবর্ধনকারী গাছ রয়েছে ৮৭টি, ফল জাতীয় গাছ রয়েছে ৩৬টি, ঔষধি ৩৩টি, বনজ ৪৭টি ও মসলা জাতীয় তিনটি গাছ ছাড়াও ছয়টি ভিন্ন জাতের গাছ রয়েছে।

এছাড়াও পার্কের মধ্যে আট দশমিক ৭৬ একর আয়তনের একটি লেক রয়েছে। লেকে স্নান করা নিষেধ থাকলেও অনেকেই তা অমান্য করছেন।

এতো ঘুরে আমি ক্লান্ত হয়ে গেলাম। রমনার গ্রিন রেস্টুরেন্টে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে খাওয়া-দাওয়া সারলাম। এরপর আবার বেরিয়ে পড়লাম রমনার বাকি অংশ দেখতে।

পার্কের অনেক অব্যবস্থাপনা দেখে মন কিছুটা খারাপ হয়ে গেল। শিশুদের জন্যে রাখা দোলনা ও নানা ধরনের খেলনা সাজানো থাকলেও এর বেশ কিছু ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। খেলনা ব্যবহারের নির্দেশিকার মধ্যে ১২ বছরের বেশি এমন কাউকে দোলনা ব্যবহার করতে নিষেধ করা হলেও বড়রা তা ব্যবহার করছেন। আমরা যেন কোনো নিয়মই মানতে শিখিনি। বেশ দুঃখজনক!
কিছুদূর এগিয়ে যেতেই দেখলাম এক দল ছেলে একটা চিল নিয়ে ঘুরছে। উৎসুক হয়ে জানতে চাইলাম ঘটনা কী? তারা জানাল, আগের রাতের ঝড়ে পাখিটি আহত হয়েছে। তারা পাখিটিকে সুস্থ করার চেষ্টা করছে। বেশ ভালো লাগল ওদের কথা শুনে।

অনেক ঘোরাঘুরির পর ঘড়ির দিকে তাকাতেই চমকে গেলাম। দুপর হতে চলেছে। বাড়ির পথে পা বাড়াতে হবে। এক বুক তাজা বাতাস নিয়ে ফিরে চললাম আমার চিরচেনা ঘরে যেখানে মা আমার অপেক্ষায় আছেন।
 

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com