চাই চাপমুক্ত পড়াশোনা

আমি এখন অষ্টম শ্রেণিতে পড়ছি। অর্থাৎ আর কয়েক মাস পরে আমাকে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা মানে জেএসসি পরীক্ষায় বসতে হবে।

এই বোর্ড পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের জন্য বাবা-মা, স্কুল শিক্ষক, কোচিং, এর শিক্ষক  সবাই আমাকে অতিরিক্ত চাপ দিচ্ছেন।

শিশুদের পড়ালেখা করার কথা আনন্দের সাথে। কিন্তু পাবলিক পরীক্ষাগুলো বিশেষ করে পিএসি ও জেএসসি শিশুদের সে আনন্দকে নষ্ট করে দিচ্ছে। তাই শিশুদের পড়ালেখা করতে হচ্ছে অনেকটা বাধ্য হয়ে। যার উদাহরণ আমি নিজে।

চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত আমি আনন্দের সাথে পড়াশোনা করতে পেরেছি। এর পর থেকেই পড়াশোনার প্রতি আমার প্রকৃত আনন্দ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। এর ক্ষেত্রে অনেকটাই দায়ী পঞ্চম শ্রেণিতে অনুষ্ঠিত প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা।

ঐ বছর বেশিরভাগ সময়ই আমাকে পড়ালেখা করতে হয়েছে। বাইরে বেড়ানোরও সুযোগ হয়নি। এমনকি স্কুল থেকেও চাপ দেওয়া হয়েছিল। ভালো ফলাফলের জন্য রমজান মাসেও স্কুলে ক্লাস করতে হয়েছে। স্কুল কর্তৃপক্ষ তাদের এ ক্লাস নেওয়ার নাম দিয়েছিল 'কোচিং।'

যাহোক ঐ  বীভৎস ক্লাস ও বছর দুটোই শেষ হয়েছে। কিন্তু ২০১৬ সালে অর্থাৎ ৮ম শ্রেণিতে আসার পর ফিরে এসেছে আগের সেই কষ্ট। জেএসসি পরীক্ষা সামনে বলে আবার বন্ধ হয়েছে বেড়ানো। রমজান মাসে আবার স্কুলে কোচিং। এর সাথে এবার যোগ হয়েছে ঈদের পরপরই অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা। এছাড়া আরও রয়েছে কোচিং ও টিউটর।

অল্প বয়সে পড়াশোনার প্রতি এত চাপ, নষ্ট করছে আমাদের শৈশবের সব আনন্দকে। এটা আমরা বুঝতে পারলেও বুঝতে পারছেন না আমাদের অভিভাবক ও শিক্ষকরা।

কোনো দেশেই হয়তো এত অল্প বয়সে পাবলিক পরীক্ষা নেওয়ার কোনো নজির নেই। শুধু আমাদের দেশেই এরকম নজিরবিহীন ঘটনা ঘটে চলেছে।

তবে সাম্প্রতিক সময়ের একটি ঘটনা আমাকে কিছুটা আশা দিচ্ছে। গত বুধবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে প্রাথমিক শিক্ষাকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত উন্নীত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

আশা করা যাচ্ছে যে প্রাথমিক শিক্ষা উন্নীত করার ফলে পিএসি পরীক্ষা তুলে নেওয়া হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ বোর্ড পরীক্ষা তুলে নিয়ে শিক্ষার্থীদের ফিরিয়ে দিবে শৈশব ও পড়ালেখার আনন্দ। তবে জেএসসি পরীক্ষা বাদ দেওয়া হবে বলে মনে হচ্ছে না। তবুও মনের মধ্যে ক্ষীণ আশা রয়েছে যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে কার্যকরী সিদ্ধান্ত নেবে।

আমার কাছে মনে হয় দশম শ্রেণি পর্যন্ত পাবলিক পরীক্ষার কোনো দরকার নেই। এ সময়টায় শিক্ষার্থীদের বাড়তে দেওয়া উচিত চাপমুক্তভাবে। তা না হলে এই চাপ ধ্বংস করবে জাতিকে। কারণ তারাই জাতির ভবিষ্যৎ।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com