পুঁথিগত খেলাধুলা, লাভ কতটা

কয়েক দিন যাবৎ ভাবছিলাম আমার পাঠ্য বই নিয়ে হ্যালোতে লিখব। ভাবনাটা মাথায় আসতেই মনে হল শারীরিক শিক্ষা বইয়ের কথা।

শারীরিক শিক্ষা বইটি প্রথম যেদিন পড়েছিলাম সেদিনই আমার আক্কেল গুড়ুম অবস্থা হয়।

সেই বইয়ের 'দলগত খেলা' অধ্যায়ে আটটা ভিন্ন ভিন্ন খেলা সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়েছে। কোন খেলায় কি কৌশল অবলম্বন করলে কতটুকু ভালো করা যাবে তাই লেখা আছে অধ্যায়টিতে। খেলা বিষয়ে সাধারণ কিছু তথ্য দেওয়া আছে।

আমার কথা হলো কোনো খেলা সম্পর্কে পড়ে কি ভালো করা সম্ভব? এসবের জন্য অবশ্যই অনুশীলন দরকার।

আমাদের ব্যবহারিক অংশের জন্য কিছুটা অনুশীলন করা হয় তা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই কম।

বিদ্যালয়গুলোতে যেখানে মাঠই নেই সেখানে বইয়ে এই ধরণের খেলা সম্পর্কে পড়িয়ে কতটা লাভ হবে তা আমার বোধগম্য নয়।

প্রায় একই কথা বলা যায় 'অ্যাথলেটিক্স ও সাঁতার' অধ্যায়ের সাঁতার শেখার কৌশলের ক্ষেত্রে। এই অধ্যায়টিতে চারটা আলাদা আলাদা সাঁতারের কৌশল দেওয়া আছে। সেগুলোর সংজ্ঞাও দেওয়া আছে। এখানে আমার কথা হল শহরের যে শিশুরা কখনও জলেই নামেনি তারা কি করে এই কৌশলগুলো বুঝবে। গ্রামে যারা পড়ালেখা করছে এটা তাদের জন্য কিছুটা উপযুক্ত হলেও আমরা যারা শহরে থাকি তাদের জন্য নয়।

এই অধ্যায়ে পড়ানো হয় মুক্ত সাঁতারে হাতের অবস্থান কোথায় থাকে, প্রজাপতি সাঁতারে মাথা ঠিক কত সেকেন্ড পর পর ডুবাতে বা ভাসাতে হয়। সাঁতার সম্পর্কে আরও অনেক কিছুই পড়ানো হয়। আমি সাঁতার জানি না। আর জিনিসগুলো পড়ে বেশ কয়েকবার পরীক্ষা দেওয়ার পরও সাঁতার শিখতে পারিনি, ভালো পারা তো দূরে থাক। তাহলে পড়ার দরকার কি ছিল?

শুনেছি পানিতে ডুবে মারা যাওয়ার হাত থেকে শিক্ষার্থীদের বাঁচাতে বাংলাদেশের সব স্কুল-কলেজে সাঁতার প্রশিক্ষণ অনুশীলন আয়োজনের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার। সরাসরি বইয়ের কৌশলগুলোকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য এ পরিকল্পনা সাধুবাদ পাওয়ার মতো।

তবে তা শুধু নীতিতেই আটকে আছে। কারণ আজ পর্যন্ত আমাদের স্কুলে সাঁতারের ক্লাস করানো হয়নি। আর আমি পত্রিকা না পড়লে জানতামই না এ নিয়ে একটি পরিপত্র জারি করা হয়েছে।

এ বছরের মার্চ মাসে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে একটি পরিপত্র প্রকাশ করা হয়েছে। খসড়ায় শিক্ষার্থীদের সাঁতার অনুশীলনে যেসব পুকুর ও জলাশয় ব্যবহার করা হবে সেগুলোকে স্বাস্থ্যসম্মত এবং সাঁতার উপযোগী করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

খসড়া মতে, কোনো স্কুল-কলেজে পুকুর না থাকলে পাশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পুকুর ব্যবহার করতে হবে। শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর এসব পুকুর সংস্কার করবে। এ নিয়ে কোনো সমস্যা দেখা দিলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সমাধান করবেন।

বইটির আরও কিছু ব্যাপারে আমার আপত্তি আছে। যেমন, একটা খেলার নাম দিয়ে পরীক্ষায় প্রশ্ন আসে 'ঠিক মাপে খেলার মাঠটি আঁক।' আমার কাছে এটি খুব অদ্ভুত লাগে। খেলাধুলা শেখানোর নামে বইয়ে যা লেখা হয়েছে সেই জিনিসগুলো পুরোপুরি মুখস্থ করে লিখতে হয়। যেখানে মুখস্থ ঠেকানোর জন্য এত চেষ্টা চলছে সেখানে কিছু 'অপ্রয়োজনীয়' তথ্য মুখস্থ করিয়ে, পরীক্ষার খাতায় লিখিয়ে শিক্ষার্থীদের 'মানসিক যন্ত্রণা' দেওয়ার মানে হয় না।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com